দেশ বিদেশ । আষাঢ় ১৪৩২

   



বিচিত্র গুহা এলগন কেভ ও তাঁর আবিষ্কার 













অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ


 

আফ্রিকার ম্যাপ খুললে দেখতে পাবে কেনিয়া- উগান্ডার সীমান্তে এলগণ নামে একটা জায়গা আছে। সেখানে শুধু পাহাড় আর জঙ্গল। এলগন পাহাড় খুব নামকরা। সেই পাহাড়ে আছে এক বিচিত্র গুহা, নাম এলগন কেভ। ওর বৈশিষ্ট্য হলো -  

ওই গুহাটা তৈরি করেছে হাতিরা। ওই পাহাড়ি অঞ্চলে হাতির খুব  উপদ্রব। আফ্রিকার হাতি আমাদের দেশের হাতির চেয়েও বড় চেহারা, ওরা দলবদ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এলগন পাহাড়ের পাশেই আছে কিছু ঝরনা ও বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া হ্রদ। ওই দুর্গম জায়গার বিচিত্র গুহাটা প্রথম আবিষ্কার করেন এক ফরাসী পর্যটক, পরে তিনি ইবোলা রোগে মারা যান। এবার ওই আশ্চর্য গুহার সৃষ্টির কথায় আসা যাক। 

আগেই বলেছি, ওই পাহাড়ের পাশে আছে ঝরনা। হাতির দল ভরপেট খেয়েদেয়ে ওই ঝর্ণায় জল খেতে আসত। বিস্তীর্ণ প্রান্তরে অজস্র শিলা খণ্ড ও ঝোপ ঝাড়। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, আফ্রিকার ওই এলগন পাহাড় আগ্নেয় শিলা দিয়ে গঠিত। বহুবছর আগে ওখানে আগ্নেয়গিরি ছিল, তারই লাভা উদগিরণে এর সৃষ্টি। এখন ওই লাভা শুকিয়ে জমাট বেঁধে সোডিয়াম লবণ পাথরে পরিণত হয়েছে। কোনও সময় হয়তো হাতির দল ওই পাশের ঝর্ণায় জল খেতে এসে অজান্তে পাথরের টুকরো খেয়ে ফেলেছিল, দেখল দিব্য স্বাদ! যেন নুনের ডেলা! সেই থেকে ওরা প্রতিদিন জলপানের পর শুঁড়ের আঘাতে পাথর ভেঙেছে আর খেয়েছে মুখসুদ্ধির মত। এভাবেই তৈরি হয়েছে হাতির বানানো ওই গুহা। 

এখন সেই গুহা দুশো মিটার লম্বা এবং তা ক্রমবর্ধমান। ভেতরে দুর্ভেদ্য অন্ধকার আর বড় বড় ফাটল। ওই ফাটলে পা আটকে কিছু বাচ্চা হাতি মারাও গিয়েছে। হাতির দল নুন পাথর ভেঙে খেয়ে বেরিয়ে গেলে তারপর গুহায় ঢোকে জেব্রা হরিণেরা। তারাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোটো নুন পাথর চেটেপুটে খায়। বন্য জন্তুদের শরীরের জন্যে লবণ খুব প্রয়োজন। মাংসাশী পশুরা মাংস ও রক্ত থেকে ওই লবণ পায় কিন্তু তৃণভোজিরা তা পায় না। তাই বিভিন্ন অভয়ারণ্যে গাছের নীচে নুনের পোটলা ঝুলিয়ে রাখা হয়, হরিণরা চেটে চেটে খাবে বলে। আফ্রিকার এই হাতির তৈরি এলগন কেভ বেড়েই চলেছে, কোথায় যে শেষ হবে বিজ্ঞানীরাও তা জানেন না।