আজ স্কুল বন্ধ। এক দিনের ছুটি। রবিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে গ্রামের বাড়ি যাবে। যেই সিদ্ধান্ত, সেই কাজ। রওনা দিল বাড়ির উদ্দেশ্যে।
রবিন দশম শ্রেণির ছাত্র। তাদের গ্রামটা নির্জন, কিন্তু অনেক সুন্দর। তার মায়ের হাতের খিচুড়িটা তার অনেক
পছন্দের। তার ইচ্ছা, এবার সে তার মাকে বলবে খিচুড়ি রান্না করতে। সে গ্রামের বাড়ি
যাওয়ার ব্যাপারে খুশি। কিন্তু কষ্ট একটাই—ছুটি মাত্র একদিন, মানে কালই তাকে আবার চলে আসতে হবে। রবিনের বাড়ি আসতে পুরো
পরিবারের সবাই খুশি, আর সবচেয়ে বেশি খুশি তার মা।
“কিরে, চলে আসলি যে! কোনো খবর না
দিয়ে?” মা বললেন।
“বন্ধ দিয়েছে, তাই চলে আসলাম।” রবিন বললো।
“তো কয় দিনের ছুটিতে এলি?” বাবা বললেন।
“এক দিনের।” উত্তর দিল সে।
“তুই তো তাহলে থাকতে পারবি না।” মা দুঃখ প্রকাশ করলেন।
“তোমার ছেলেকে খাওয়াও বেশি করে, এখন তো আমায় ভুলে যাবে!” সুনিয়া বললো। সুনিয়া হলো রবিনের
সমবয়সী বোন। দুজনের মধ্যে খুনসুটি লেগেই থাকে। তাদের চারজনের পরিবার।
“আমাকে দেখলেই তো তোর জ্বলে।” বলে রবিন।
“আমার ফকিন্নিদের দেখলে কেন জ্বলবে?” বিপরীত প্রশ্ন করে।
“এখন তো বলবি আমাকে ফকিন্নি! নিজের কাছে টাকা নেই, আবার আমায় বলে।” উল্টো জবাব দেয় রবিন।
“আমার কাছে নেই তো কী হয়েছে? তোর কাছে আছে!
থাকলে আমার জন্য অবশ্যই আচার নিয়ে আসতি।”
“দেখেছেন মা, আমাকে ফকিন্নি বলে! আর সে
একটা...!”
“এই একটা দিব, আর একটা কথা বললে!”
“এমনিতে তোর সাথে কে কথা বলবে?”
“এখন তো বলছিস।”
“এই তোরা থামবি? দেখা হলেই শুধু মারামারি আর
ঝগড়া করা!”
“আমি কোথায় করছি? তোমার ছেলে না নিজে থেকেই
এসে ঝগড়া করছে। তুমি তোমার ছেলেকে নিয়ে থাকো, আমি গেলাম।” এই বলে সুনিয়া
নিজের রুমে চলে যায়।
“যা,
ফ্রেশ হয়ে আয়। তোর জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করছি।”
“মা,
আমাকে কিন্তু খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে হবে।”
“আচ্ছা, কাল দুপুরে রান্না করে
খাওয়াবো।”
তারপর রবিন নিজের রুমে চলে আসে। সে ফ্রেশ হওয়ার জন্য
ওয়াশরুমে যায়।
-২-
“মা,
আমাকে খাবার দাও।” বলে রবিন।
“আচ্ছা, দিচ্ছি।” বলে তার মা তাকে
খাবার দেয়—তার প্রিয় খিচুড়ি। সে অনেক খুশি হয়। বিকেল শেষে সে বাড়ি থেকে বের হওয়ার
জন্য প্রস্তুতি নেয়।
“মা,
আমি যাচ্ছি।” এই বলে রবিন বের হতে যায়। তখন তার মা তাকে
থামায়।
“তোর প্রিয় খিচুড়ি রাতে খাস।” এই বলে তার মা তাকে একটা বাক্স
দেয়।
সে যখন বড় কবরস্থান দিয়ে যাচ্ছিল, তখন সন্ধ্যা হয়ে যায়। হঠাৎ পিছন থেকে তাকে কেউ ডাকে। সে
সেদিকে তাকায়, কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। এভাবে তিনবার হয়, সে কাউকে দেখে না। তার মনে ভয় কাজ করতে শুরু করে। সে দ্রুত
হাঁটা শুরু করে।
হঠাৎ কেউ তার পিছু নেয়। সে যখন পিছনে তাকায়, একটা মেয়েকে দেখতে পায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে মেয়েটি
উধাও হয়ে যায়। সে যখন সামনের দিকে তাকায়, তখন দেখে মেয়েটা তার সামনে
দাঁড়িয়ে। মেয়েটার চেহারা ভয়ংকর রকমের। রবিন তা দেখে অজ্ঞান হওয়ার
উপক্রম হয়। মেয়েটা তখনই তার গলা চেপে ধরে।
সাথে সাথে রবিনের ঘুম ভেঙে যায়।
তার মানে, সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল!
তখনই সে খেয়াল করে, তার টেবিলের উপর একটা
খিচুড়ির বাক্স—ঠিক স্বপ্নে দেখা বাক্সের মতো। কবরস্থানের দিকের জানালাটা
খোলা, অথচ তার মনে আছে, সে জানালাটা বন্ধ করেছিল। সে তো বাড়ি যায়নি। তাহলে খিচুড়ির বাক্স এল
কোথা থেকে?