কাজু তাদের গাড়ি
ড্রাইভার, প্রায় ২ বছর ধরে তাদের বাড়িতে কাজ করছে। কাজু বললো, “দাদাবাবু ভালো আছেন আপনারা?” সমীরণ উত্তর দিলো, “হ্যাঁ, সবাই ভালোই আছি। কিন্তু তুমি আজকে এলে কেন?” কাজু উত্তর দিলো, “আপনারা আজকে ফিরবেন সেটা জানতাম, তাই একবার দেখা করতে আসলাম”। কাজু থাকতো পশ্চিমের দিকে একটি আদিবাসী পাড়াতে, ছোটবেলায় একটি অনাথ আশ্রমে মানুষ,
তারপরে কাজের সূত্রে তার এই অঞ্চলে এসে
থাকা। সমীরণ চক্রবর্তী বা তার স্ত্রী কোনোদিনই তাকে সেভাবে সমাদর করতেন না। এমনকি
কাজু যখন তাদের বাড়িতে আসতো কোনোদিনও তাদের ঘরের ভিতরে আসার জন্য সৌজন্যবোধ টুকুও
দেখান নি। সে শুধু সকালে কাজে আসতো আর গাড়ি নিয়ে দাদাবাবু কে কলেজে পৌঁছে দিতো এবং
বিকালে কলেজ থেকে তাকে বাড়ি নিয়ে আসতো। এই কাজের জন্য সে মাসিক ভালো বেতন পেতো, এটুকুই ছিলো তার কাছে আনন্দের। বেশ কয়েকবার সমীরণ বাবু নানা কারণে কাজুকে খুব
অপমান করেন। কিন্তু পেটের দায়ে সে কাজটা ছাড়েনি কোনোদিনও, মুখ বুজে সব অপমান সহ্য করেছে। সমীরণ চক্রবর্তী বললেন, “ঠিক আছে কাজু! তুমি এখন বাড়ি যাও। কাল সকাল সকাল চলে এসো ঠিক সময় মতন। আমাদের
এখন ঘরে অনেক কাজ আছে”। কাজু বললো,
“আজ্ঞে! দাদাবাবু আসছি”।
তারপরে কিছুদিন
সবকিছু আগের মতন রুটিন মাফিক চলছিল। কিন্তু একদিন হটাৎ করে কাজু কোনো অজ্ঞাত কারণে
সেদিন কাজে আসেনি, সমীরণ বাবু ফোন করে জানলেন যে কাজুর শরীর
খারাপ, তাই সে ঐদিন আসতে পারবে না। সমীরণ বাবু রেগে গিয়ে কিছু না বলেই ফোন টা কেটে
দিলেন। তারপরে মাথা গরম করে নিজেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন গন্তব্যে। কিন্তু কি
দুর্ভাগ্য.! কিছু পথ যাওয়ার পরেই রাস্তায় বাঁক নিতে গিয়ে তার গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটে
একটি বাসের সাথে ধাক্কা লেগে। আহত অবস্থায় সমীরণ বাবুকে ভর্তি করা হয় হসপিটালে।
খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ হসপিটালে ছুটে আসেন বসুন্ধরা দেবী এবং পুত্র সার্থক। ডাক্তার
জানান সমীরণ বাবুকে বাঁচাতে গেলে অনেক ব্লাড প্রয়োজন, কিন্তু হসপিটালে প্রয়োজনীয় ব্লাড গ্রুপের কোনো স্যাম্পল পাওয়া যাচ্ছে না।
দুর্ভাগ্যবশত স্ত্রী এবং পুত্রের সাথেও তার প্রয়োজনীয় ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করে না।
কিছুক্ষণ বাদেই হসপিটালে উপস্থিত হয় কাজু এবং সে রক্ত দিতে চায় নিজের মালিক কে।
আশ্চর্যজনক ভাবে তার সাথে সমীরণ বাবুর ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করে যায়। ঈশ্বরের অশেষ
মহিমা.! মানুষটা শেষ অব্দি প্রাণে বাঁচলো। কিছুদিন পরে একটু সুস্থ হয়ে উঠলে যখন
কাজুর সাথে সমীরণ বাবুর দেখা হয়, কাজুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন আর বলতে
থাকেন “আমাকে মাপ করে দিও ভাই, তোমাকে সময় অসময়ে কতই না অপমান করেছি, সেই তুমি কিনা এই বিপদের দিনে আমার প্রাণ বাঁচালে!”
কাজু মৃদু হেসে উত্তর
দিলো “বাবু আপনাকে রক্ষা করাটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমি জন্ম থেকেই অনাথ, আমার কি জাতি বা ধর্ম তা আমার জানা নেই,
কিন্তু আমার কাছে মানুষের একটাই ধর্ম, তা হলো মানব ধর্ম”। কাজুর মুখে এই কথা শুনে সমীরণ বাবু ও তার পরিবার নিজের ভুল
বুঝতে পারলেন এবং একই মহানুভবতায় সপ্রতিভ হলেন।