গল্প । জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২




 পান্ডবেশ্বরের প্রোমশন












অভিজিৎ দত্ত 

কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ



 

থানার মধ্যে শ্মশানের স্তব্ধতা।
      --- তোর ভয়ডর কি সব ব্যাঙ্কের লকারে গচ্ছিত রেখে এয়েচিস রে ন্যাপলা। দারোগা রসময় নন্দী আর স্থির থাকতে পারলেন না।  

---যে বড়বাবুর দাপটে ডায়নোসরেরা পর্য্যন্ত ইতিহাস বইয়ের পাতা থেকে নেমে আসে গরু আর বাঘের সঙ্গে একঘাটে জল খাবে বলে, তার প্রতি মিনিমাম সম্মানটুকু…

বড়বাবু হাত নেড়ে রসময়কে থামান। আবলুশ কাঠের মতো মুখখানি তাঁর রাঙিয়ে উঠে কিম্ভুত বেগুনি রং ধরেছে। বারো কেজি তোলো হাঁড়ির মতো মুখখানি থেকে রয়েল বেঙ্গলের হুঙ্কার ছেড়ে বললেন ---যা চাইছে এনে দাও, রসময়।

---এ্যা-ই ! দেখেছেন--- ? একজন বড় মাপের মানুষের সঙ্গে হেঁজিপেঁজি গুলোর এখানেই তফাৎ। গুণী লোকেই একমাত্র শিল্পীর কদর জানে। রসময়ের পানে চেয়ে দাঁতের হলুদরঙা আভা ছড়িয়ে বলে ন্যাপলা।--- যান বড়বাবুর অর্ডার তামিল করুন---

রসময় দাঁত কিড়মিড় করে বলে     ---আমি হেঁজিপেঁজি লোক আর তুই কিনা হলি শিল্পী? ইচ্ছে করছে লকআপে ঢুকিয়ে তোর তেল আগে বের করি।

---আপাততঃ সে ইচ্ছে পকেটে পুরে বড়বাবুর অর্ডারটা ক্যারি আউট করুন। বেশি কিছু তো নয়, আট পিস মাখন টোস্ট, দুটো ডবলডিমের মামলেট আর বড় এক গেলাস ডবল দুধের রাবড়ি মারা চা। তাও সকালের ব্রেকফাস্টটা হয়নি বলে। সাতসকালে একটা ঘুমন্ত মানুষকে বিছানা থেকে তুলে থানায় হাজির। পুলিশে কাজ করলে কি চোখের চামড়া থাকতে নেই?.... আর হ্যাঁ, ন্যাপলা ন্যাপলা করবেন না তো, বড্ড প্রেস্টিজে আঘাত করে। যবে থেকে ছিঁচকে চুরি ছেড়েছি--- শ্রী নেপালচন্দ্র গুছাইত নামটা পুরো সাইন করি। আপনি ছোট করে নেপালচন্দ্র বলতে পারেন।

বড়বাবু তাঁর সাগরেদদের বিদায় করে বিশাল বপুখানি যথাসম্ভব টেবিলের ওপর ঝুঁকিয়ে এনে ফিসফিস করে বললেন--- তোমার ব্রেকফাস্ট আসার আগেই তাহলে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলি। সিক্রেট ব্যাপার! সবার সামনে তো বলা যাবে না---

---সে তখনই বুঝেছি। মাথার চুলে আঙুল চালিয়ে একবার ঝাঁকিয়ে নেয় নেপাল। এটা ওর মুদ্রাদোষ। ব্যাকব্রাশ করা ফুরফুরে মাথা ভর্তি চুলের একপাশে কায়দার স্বর্ণাভা। দাড়ি গোঁফের যত্ন আছে, দেখেই মালুম হয়। পরণে কেতার জিন্স্‌, জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া, টি শার্টখানা ব্র্যান্ডেড! গলায় একটা সরু হার উঁকি মারছে, ভরি তিনেকের তো হবেই। বুক পকেট থেকে উঁকি মারছে এঁটো আপেল ব্র্যান্ডের একখানা জম্পেশ মোবাইল। হাতে ঘড়ি নেই। শুধু কব্জিতে পেঁচানো গুরুদেবের শুদ্ধ করা মন্ত্রপূত মালা--- নেপালের রক্ষাকবচ।

---সে তখনই বুঝেছি। বলল নেপাল।--- আপনার সৈন্যবাহিনী যখন আমার রেস্টিং টাইমে বিছানা থেকে তুলে আনল, তখনই জানি বড়বাবু পাণ্ডবেশ্বর রায় তো বিরাট কোহলির স্ট্রেট ড্রাইভ কিম্বা পেট্রোলের দাম বাড়া নিয়ে আলোচনা করবেন না। নির্ঘাত বড় কোনো ম্যাগনাম সাইজের প্রবলেমই হবে।

বেশ অপমানিত বোধ করলেও পাণ্ডবেশ্বর হজম করে গেলেন। পরে এক সময় কোনো অছিলায় তুলে আনলেই হবে। লকআপও আছে, আর তেল মাখানো লাঠিরও অভাব নেই থানাতে। এখন তাঁর সামনে সমূহ বিপদ। এবং তাঁর ত্রাণকর্তা তাঁর সামনে বসে আছে। ক্ষ্যাপানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

তবু প্রথমেই মূল কথায় গেলেন না পাণ্ডবেশ্বর। কেমন যেন বাধো বাধো ঠেঁকল। তাই কিছু না ভেবে আলটপকাই বলে ফেললেন--- তোমার তো বেশ উন্নতি হয়েছে হে নেপাল!

ভাষাতেও… কথার ফাঁকে ইংরিজি, শুদ্ধ বাঙলা--- বাহঃ!

---পড়াশুনা করছি যে বড়বাবু। হায়ার স্টাডিজ---

পাণ্ডবেশ্বর সামান্য বিষম খেলেন। সামলে নিয়ে বললেন---এক্কেবারে হায়ার? লোয়ারটা কি তাহলে---

---ভেবে দেখলাম লোয়ারটা ওয়েস্ট অফ টাইম। তাছাড়া আমার যা ক্যাপাকাইটি, তাতে লোয়ার লাগবে না। তাই ফার্স্টেই হায়ারে গেলাম। এখন তো সব ইউনিভারসিটি উদোম খোলা--- মানে ওপেন কিনা।… ঢুকে গেলাম একটায়!

বড়বাবু আর ঘাঁটাতে সাহস পেলেন না। কোন কথা থেকে আবার কী কথা এসে পড়ে। শাস্ত্র বলেছে, অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর! আর এ তো একেবারে হায়ার-লোয়ারের হারিকিরি!

নেপালচন্দ্র পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে গুছিয়ে বসে বলল--- ছাড়ুন ওসব পড়াশুনার আলোচনা। ব্রেকফাস্ট আসতে আসতে আপনার প্রবলেমটা ততক্ষণ শুনি।

সেই ভালো। মনে মনে ভাবেন পাণ্ডবেশ্বর। অন্ততঃ ষাঁড়ের সামনে বেহালা বাজানো থেকে তো রেহাই পাওয়া গেল! ন্যাপলা চোরের সঙ্গে শিক্ষা নিয়ে আলোচনা রীতিমতো ঝকমারি ব্যাপার!

বদনখানি ম্লান করে, আগুনের ভাঁটার মতো দুটো চোখ যথাসম্ভব ম্রিয়মান করে প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে বড়বাবু বললেন--- ছাপ্পান্ন চলছে নেপালচন্দ্র, আর মাত্র চারটি বছর চাকরি আছে। বেশিরভাগ সময়টা কেটে গেল এই অজ গাঁয়ে গরুচুরি, ছাগলচুরির কেস করতে করতে। আর তোমাদের মতো কিছু ছিঁচকে চোর গাঁটকাটা… থুড়ি তোমার কথা নয়, তোমার তো এখন বিরাট ব্যাপার, খানদানি ব্যাপার… তুমি এসবের অনেক ঊর্দ্ধে। পাণ্ডবেশ্বর অনেক কষ্টে সামাল দেন।

---ঠিক আছে বড়বাবু! ওসবে আমি কিছু মনে করি না। আপনারা হলেন মা-বাপ, সন্তান বিগড়েছিল, শাসন করেছেন এককালে। এখন ছেলে হাতের বাইরে, অনেক বড় খেলোয়ার--- কী করবেন বলুন। তা এই জন্যে রেস্টিং টাইমে থানায় তুলে আনলেন? নেপালচন্দ্র বেশ বিরক্ত।

---সময় বহিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়। যে জন না দেখে তারে ধিক্ শতধিক্।… শুনেছ তো কথাটা। তুমি একজন শিক্ষিত তস্কর। সমাজে কত দাম তোমার। বড়বাবুর ভাবখানা গদগদ।---

আমার আর তর সইল না যে। একটা বড় দাঁও না মারলে প্রেস্টিজে যে গ্যামাক্সিন বাবা নেপালচন্দ্র! বাড়িতে বৌ ছেলে মেয়েরা মানে না। গ্রামের মানুষও তেমন পাত্তা দেয় না। পুলিশ হয়ে কাঁহাতক আর এ অপমান সহ্য করা যায়?

---বুঝেছি। দশ, বিশ, পঞ্চাশের পাত্তিতে আপনার চলছে না--- একদম দু-হাজারি গোলাপী পাত্তি চাই। নেপাল চোর মাথা নাড়ে বিজ্ঞের মতো।

---অতটা না হলেও, সবজে রঙা পাঁচশো হলেও চলবে। জীবনের শেষ ক’টা বছর ট্রান্সফার হয়ে হোমটাউনে কাটাতে পারি আরকি। পাণ্ডবেশ্বরের স্বরে কাকুতিমিনতি ঝরে পড়ে।

---হুঁ, সবই তো ঠিক আছে। কিন্তু আপনার প্রোমশনের জন্য তো আর আমার বেরাদরির ক্ষতি করতে পারিনা!... আপনার এই উপকারটা করে আমার লাভ?

---যা চাইবে নেপাল, টাকাপয়সা তেমন নেই যে অনেক দিতে পারব। তবে---

---জানি। হাত তুলে বড়বাবুকে থামায় নেপাল।--- আর ওসব আপনার কাছে আমি আশাও করছি না। তবে কিনা…। একটু চুপ করে যায় সে। ---আমার একটা স্বপ্ন আছে বড়বাবু। আর তার জন্যে আপনাকে দরকার। তবে এখন নয়… যথাসময়ে ঠিক চেয়ে নেব।

ব্রেকফাস্ট শেষ করে উঠে দাঁড়ায় নেপাল। ফুরফুরে সোনালী চুলে আঙুল চালিয়ে বড়বাবুকে আশ্বস্ত করে ---আপনি ভাববেন না। ভাববো আমি, দুটো দিন। আশাকরি তার মধ্যে একটা রাস্তা বের হবে এ মাথা থেকে। বলে নিজের কপালের একপাশে আলতো টোকা মারে।

---সে তো জানি! সোনার টুকরো ছেলের অমন হীরের টুকরো মাথা… ঘামালে ভারত-চীন আকচাআকচিরও একটা সমাধান সূত্র বেরিয়ে যাবে, আর এ তো সামান্য পাণ্ডবেশ্বরের প্রোমশন---। বড়বাবু ভুঁড়ি দুলিয়ে, প্রকাণ্ড থলথলে মাথাখানি নাড়িয়ে তাঁর সে কী কৃতজ্ঞতার বহর!

আজও থানার ভিতর থমথমে। পিন পতনের শব্দও স্পষ্ট শোনা যায়।

সেই স্তব্ধতা ভেদ করে আজও প্রথম কথাটা দারোগা রসময় নন্দীই বললেন।--- ভেবেছিলি বড়বাবুর মতো এমন দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুলিশকর্তা যার দাপটে কিনা বাঘ আর গরুর সঙ্গে ইতিহাসের পাতা থেকে ডিপ্লোডকাস, স্ট্রেপটোককাসরা পর্য্যন্ত কেবলমাত্র এই গ্রামের এঁদোপুকুরের জল খাবে বলে ইতিহাস বই থেকে নেমে আসে

পাণ্ডবেশ্বর আজ আর বাধা দিলেন না। তাঁর তোলো হাঁড়ির মতো মুখে তখন ষড়ঋতুর খেলা চলছে। কখনো গ্রীষ্মের দাবদাহ, কখনো বর্ষার স্নিগ্ধ আমেজ, শরতের মৃদুমন্দ কৌতুক, কখনো বা বসন্তের দখিনা বাতাস। চোখদুটিতে এই ক্রুরকুটীল ভর্ৎসনা, তো এই তাতে শিশুর অনাবিল সারল্য।

দারোগা রসময় নন্দী বাধাপ্রাপ্ত না হয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে বলে চললেন ---এই হেন বড়বাবুর সঙ্গে পাঙ্গা নেবার দুঃস্বপ্ন তোর মাথায় এল কী করে রে ন্যাপলা! তুই কি একবারও ভেবেছিলি কার সঙ্গে তুই টক্কর দিতে যাচ্ছিস! চ্যালেঞ্জ দিয়ে নরহরি সামন্তর গুদামে লুটপাট ডাকাতি করে পার পেয়ে গেছিলি তুই। এই ছ্যাকড়াডাঙা থানার পুরো পুলিশ ফোর্স সেদিন তোর টিকিটিও ছুঁতে পারেনি--- শুধুমাত্র প্রমাণের অভাবে। আমরা সে জ্বালা কি ভুলে যাব এত সহজে?

যাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলি বলা, তাকে কিঞ্চিত বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। ছেঁড়া জিনস্‌ আরও ছেঁড়া, সঙ্গে শার্টখানিও ধূলাধূসরিত। ছুটে পালাতে গিয়ে পায়ের সাদা স্নিকার্স ফেটে চৌচির আর তার মধ্যে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে প্রচণ্ড ব্যাথা--- খুঁড়িয়ে ছাড়া হাঁটার উপায় নেই। গেঞ্জির তলায় দুখানা কাঠপিঁপড়ে শিরদাঁড়া বেয়ে উঠছে কিন্তু মারার উপায় নেই, কারণ তার হাতে হাতকড়া। চুলের সোনালী আভায় ধুলোমাটি মিশে শ্রী অঙ্গের সঙ্গে মানানসই রঙ ধরেছে।

তবু কথা বলল নেপালচন্দ্র। এমন দুরমুশ হওয়া অবস্থাতেও কষ আছে ছেলের শরীরে, মানতেই হবে। অন্য কেউ হলে মশার ডানা ঝাপটানোর শব্দের বেশি শুনতে পাওয়া যেত যা।--- কাজটা আপনি ঠিক করলেন না বড়বাবু। আপনার প্রতি আমার হাই রেসপেক্ট ছিল, সেটা আর রইল না!

শুনে কিছুক্ষণ থম মেরে রইলেন পাণ্ডবেশ্বর। ছোঁড়া বলে কী! তারপর তাঁর গোদা কণ্ঠস্বরের ভিতর থেকে কীভাবে যেন একটা খুনখুনে গলার খিলখিল হাসি থানা কাঁপিয়ে উছলে পড়ল।--- আহাম্মক কোথাকার! ছুঁচো, উল্লুক, বেল্লিক, গবেট! বলেই আর এক প্রস্থ হাসি।

বোধহয় বিশেষণগুলো ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পেরে তিনি আহ্লাদে আটখানা হলেন!

---এই তোর হায়ার স্টাডিজ? ব্যাটা সহজ কথাটা বুঝলি না, সেদিন থানায় ডেকে তোকে তোয়াজের আড়ালে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়া হয়েছিল! তুই ভাবলি পাণ্ডবেশ্বর রায় কিনা তোর কাঁধে চেপে প্রোমশনের বৈতরিণী পেরোতে চাইছে! নিরালম্ব অশ্বডিম্ব একখানা!

ষড়ভূজ চতুর্বেদীকে হঠাৎ করে দলে ঢোকানো মহা মুর্খামি হয়েছে নেপাল সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিল। হাড়গুলো টনটনাচ্ছে বেজায়। আর তা ওই ষড়ভূজের হস্তশিল্পের কারণে। লোকটা কোথা থেকে উদয় হয়ে বলল ডাকাতির কৃৎকৌশল তার অধিগত, আর শুধুমাত্র তার কথায় আর চেহারাপত্র দেখে তার মতো এমন উঁচুদরের খেলোয়ার কিনা ভড়কি খেয়ে গেল! একেই বলে বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ!

গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ডাকাতির ছকটা নিখুঁত করেছিল নেপালচন্দ্র। শুক্রবার টাকা জমা পড়ে ব্যাঙ্কে। এই শনিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ, রবিবারও। তাই টাকা ব্যাঙ্কের লকারেই থাকবে। হিসেবে কোনো গলদ ছিল না। শুক্রবার রাতটা তাই টার্গেট করেছিল নেপাল। দলবল নিয়ে হাজিরও হয়েছিল অকুস্থলে। কোলাপসিপল গেটে তালা মারা, শাটারের দুপাশেও তালা। অবলীলায় ভাঙল ওই ষড়ভূজ চতুর্বেদী। নিজেই তুলল শাটার। মনে মনে তারিফ না করে পারেনি নেপাল। এমন একজন জুয়েলকে দলে রাখার কৃতিত্বে নিজেকেই খানিক বাহবা দিচ্ছিল মনে মনে।

তারপর ভিতরে ঢুকে আলো জ্বালাতেই সব পরিস্কার হয়ে গেল। পুরো বাহিনী নিয়ে ম্যানেজারের চেয়ারে হাজির পাণ্ডবেশ্বর। নেপালের সাগরেদরা রিভলবার বের করেছিল। কিন্তু তার কোনোটাতেই গুলি ছিল না। ষড়ভূজ তার হাতের কারসাজিতে আগেই সেগুলোকে ফাঁকা করে রেখেছে।

কোলাপসিপল গেটে সেই-ই কখন নতুন তালা মেরে দিয়েছে, কেউ লক্ষ্যই করেনি। একটা গুলি চলল না, লাশ পড়ল না। গোটা দলটা ধরা পড়ে গেল। এবার শুধু ভল্ট থেকে টাকা বের করে এনে ছকটা সম্পূর্ণ করে কেসখানাকে মনের মতো করে সাজিয়ে নেওয়ার অপেক্ষা!

ষড়ভূজ চতুর্বেদীর হেফাজতে ছ’জনের ডাকাত দলকে সদরে চালান দেবার প্রক্রিয়া শুরু হল সোমবার সকালে। তার আগে শনি রবিবার বড্ড ধকল গেল বড়বাবু পাণ্ডবেশ্বরের। এই ছ’জনকে ঘানিতে চাপিয়ে তেল বার করার প্রয়োজন ছিল। বেশ কয়েকটা বড় ডাকাতিতে টাকা কড়ি কোথায় রেখেছে জানার দরকার ছিল। তাই---

সদর থেকে গাড়ি এল ছ’জনকে শ্রীঘরে নিতে। সঙ্গে ষড়ভূজ। হাতকড়া পরা ছ’টি প্রাণীর ঝোড়ো কাকের মতো অবস্থা। একে একে উঠল গাড়িতে। নেপালচন্দ্র গাড়িতে ওঠার আগে বড়বাবু তার কাঁধে হাত রাখলেন।--- অপরাধের ছোট বড় থাকলেও, আইনের চোখে সবাই অপরাধী। একটাই পরিচয়… ক্রিমিনাল! পড়াশুনাটা চালিয়ে যেও। হাজতে অনেক সময় পাবে। জীবনটা নিয়ে ভেবো---

মাথা নিচু করে চোখ নামিয়ে কথাগুলো শুনল নেপালচন্দ্র। বড়বাবু তার মাথায় হাত রেখে বললেন--- তোমার স্বপ্নের কথা আমি ষড়ভূজের কাছে শুনেছি। পড়াশুনা শিখে তুমি পুলিশ হতে চাও। ভালো হতে চাও। মানুষ হতে চাও। এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে। ইংরিজিতে একটা কথা আছে--- সব পুণ্যবানের একটা অতীত আছে, সব পাপীর একটা ভবিষ্যৎ! এ পৃথিবীর আলোয় আমাদের সকলের অধিকার। বিশেষ করে যে অন্ধকার দুনিয়াটা দেখেছে।… যেদিন জেল খেটে বেরোবে, আমি থাকব তোমার পুলিশ হওয়ার এ্যাপ্লিকেশনে রেকমেন্ড করার জন্য। চিন্তা কোরো না---

ভ্যান রওনা করে দিয়ে পাণ্ডবেশ্বর রায় হঠাৎ যেন নেপালচন্দ্রের জন্য এক অদ্ভুত তৃপ্তি অনুভব করলেন মনের কোণ জুড়ে। প্রোমশনের খুশি তার কাছে তুচ্ছ---