দীর্ঘায়ু নিয়ে বড় হচ্ছিলাম,
পথের ধারে কোন এক দম্পতি -
আমার জন্ম দিয়েছিল।
প্রখর গ্রীষ্মের খরতাপে ভোরবেলায়,
ওরা ছোট্ট শিশিতে জল আনতো-
আমার পায়ে ঢালতো।
আমি ঝলমলিয়ে বড় হচ্ছিলাম,
সরু হাতে চওড়া অঙ্গ খুশিতে -
দুলে দুলে উঠতো।
পথিকেরা অপেক্ষা করতো,
আমি কবে বড় হবো!
ওরা আমার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতো।
আমার বয়স বছর দু'য়েক হবে,
আমার শরীর ভারি হতে লাগলো -
প্রখর রোদ উপেক্ষা করে।
আমি রঙীন হ'লাম--সব অঙ্গে।
মৌমাছি -প্রজাপতি ঘুরে ঘুরে -
রঙিন অঙ্গ থেকে পেট ভরালো।
ভরদুপুরে দা হাতে বৌ গুলো -
আমার কোলে বসে ঘুমে ঢুলু।
কি শান্তি!! আমি ওদের আশ্রয়।
একদিন এক গাড়ি এলো,
দাঁড়ালো আমার পাশে -
হাতে ফিতে-পথ জরিপ করলো।
আমি তখন ভর যুবতী,
আমার গায়ে গোল গোল-
অজস্র সন্তানের ধারক।
আমি খুশিতে ভরপুর,
হাওয়ায় দুলে দুলে --
বৃষ্টিভেজা ভোরবেলায় আমি স্নাত।
আমি বুঝতে পারিনি,
এই খুশি আর দিন দু'য়েকের-
এলো এক হাঙ্গরমুখো শূঁড়।
শুঁড় দিয়ে মাটি থেকে
আমায় উৎপাটিত করলো-
আমি শায়িত হ'লাম।
ভূমি 'পরে লুটায়,
আমার অজস্র সন্তান -
কি দোষ ছিল আমার!!
মাত্র এক ফুট জায়গা,
পেলে আমার সন্তানেরা-
পৃথিবীর আলো দেখতো।
আমি এক হতভাগ্য,
জারুল বৃক্ষ -
বেগুনি ফুলে ভরে যেতাম।
রাস্তা প্রসারণ হবে,
আমার জন্যে একফুট জায়গা নেই -
কতকত ফুট জায়গা মানুষের চাই।
আমাকে উৎখাত করে
তৈরি হোল চওড়া বেদি-
আমি তখনো শায়িত -সজীব।
বক্তৃতা আরম্ভ হোল,
আজ ৫ই জুন -
বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
"গাছ লাগাও -প্রাণ বাঁচাও"
আমি তখনো বেঁচে -
অর্ধমৃত -সন্তানহারা মা।
আমার বাঁচার অধিকার
কেড়ে নিয়ে উচ্চস্বরে ধ্বনিত হোল-
"গাছ লাগাও- প্রাণ বাঁচাও"।
আমি আর থাকবো না,
ধীরে ধীরে শুষ্কতার গ্রাসে-
আমি আর নেই -
আমি গর্ভবতী এক জারুল বৃক্ষ।