ছড়া - কবিতা । শ্রাবণ ১৪৩২



 আমি আর নেই













সাবিত্রী জানা

ষন্নিগ্রহী

মেদিনীপুর,  পশ্চিমবঙ্গ



 

দীর্ঘায়ু নিয়ে বড় হচ্ছিলাম,

পথের ধারে কোন এক দম্পতি -

আমার জন্ম দিয়েছিল।


প্রখর গ্রীষ্মের খরতাপে ভোরবেলায়,

ওরা ছোট্ট শিশিতে জল আনতো-

আমার পায়ে ঢালতো।


আমি ঝলমলিয়ে বড় হচ্ছিলাম,

সরু হাতে চওড়া অঙ্গ খুশিতে -

দুলে দুলে উঠতো।


পথিকেরা অপেক্ষা করতো,

আমি কবে বড় হবো!

ওরা আমার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতো।


আমার বয়স বছর দু'য়েক হবে,

আমার শরীর ভারি হতে লাগলো -

প্রখর রোদ উপেক্ষা করে।


আমি রঙীন হ'লাম--সব অঙ্গে।

মৌমাছি -প্রজাপতি ঘুরে ঘুরে -

রঙিন অঙ্গ থেকে পেট ভরালো।


ভরদুপুরে দা হাতে বৌ গুলো -

আমার কোলে বসে ঘুমে ঢুলু।

কি শান্তি!! আমি ওদের আশ্রয়।


একদিন এক গাড়ি এলো,

দাঁড়ালো আমার পাশে -

হাতে ফিতে-পথ জরিপ করলো।


আমি তখন ভর যুবতী,

আমার গায়ে গোল গোল-

অজস্র সন্তানের ধারক।


আমি খুশিতে ভরপুর,

হাওয়ায় দুলে দুলে --

বৃষ্টিভেজা ভোরবেলায় আমি স্নাত।


আমি বুঝতে পারিনি,

এই খুশি আর দিন দু'য়েকের-

এলো এক হাঙ্গরমুখো শূঁড়।


শুঁড় দিয়ে মাটি থেকে 

আমায় উৎপাটিত করলো-

আমি শায়িত হ'লাম।


ভূমি 'পরে লুটায়,

আমার অজস্র সন্তান -

কি দোষ ছিল আমার!!


মাত্র এক ফুট জায়গা,

পেলে আমার সন্তানেরা-

পৃথিবীর আলো দেখতো।


আমি এক হতভাগ্য,

জারুল বৃক্ষ -

বেগুনি ফুলে ভরে যেতাম।


রাস্তা প্রসারণ হবে,

আমার জন্যে একফুট জায়গা নেই -

কতকত ফুট জায়গা মানুষের চাই।


আমাকে উৎখাত করে 

তৈরি হোল চওড়া বেদি-

আমি তখনো শায়িত -সজীব।


বক্তৃতা আরম্ভ হোল,

আজ ৫ই জুন -

বিশ্ব পরিবেশ দিবস।


"গাছ লাগাও -প্রাণ বাঁচাও"

আমি তখনো বেঁচে -

অর্ধমৃত -সন্তানহারা মা।


আমার বাঁচার অধিকার 

কেড়ে নিয়ে উচ্চস্বরে ধ্বনিত হোল-

"গাছ লাগাও- প্রাণ বাঁচাও"।


আমি আর থাকবো না,

ধীরে ধীরে শুষ্কতার গ্রাসে-

আমি আর নেই -

আমি গর্ভবতী এক জারুল বৃক্ষ।