ডাকটিকিটে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ও তাঁর আবিষ্কার
ড. সৌমিত্র চৌধুরী কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ
| | পুরানো চিঠি পত্র ঘাঁটতে গিয়ে একটি ডাকটিকিট নজরে এল। ছবিতে এক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক। ডাকটিকিটের মধ্যদিয়ে বিজ্ঞানের বহু আবিস্কার এবং বিজ্ঞানিকে স্মরণ করা হয়েছে। অনেক দেশ বিজ্ঞানীদের সম্মান দিয়েছেন ডাকটিকিট প্রকাশ করে। এক দশক আগে, ২০১১ সালটি চিহ্নিত হয়েছিল ‘আন্তর্জাতিক রসায়নবিজ্ঞান বর্ষ’ হিসাবে। সেই বছর বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞান সংক্রান্ত ডাক টিকিট
প্রকাশ করেছিল বহু দেশ। আমাদের দেশও। আমেরিকা প্রকাশ করেছিল বিজ্ঞান সংক্রান্ত
অনেক গুলো ডাকটিকিট। দেশনেতা এবং
রাষ্ট্র প্রধানরাই আগে সম্মানিত হতেন ডাকটিকিটে। সেই রেওয়াজ বদলে গেল পরবর্তী
কালে।
বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক মেরি কুরি, লিনিয়াস পলিং
এঁদের ডাকটিকিট প্রকাশ করল আমেরিকা এবং অন্য দেশও। এই তালিকায় ঢুকলেন অপেক্ষাকৃত
কম আলোচিত এক বৈজ্ঞানিক মেলভিন কেলভিন (Melvin Calvin)। ডাকটিকিটে তাঁরই ছবি। ছবির এই মেলভিন কেলভিন লর্ড কেলভিন নন কিন্তু যিনি তাপমাত্রার কেলভিন স্কেল আবিষ্কার করেছিলেন। লর্ড কেলভিন (Lord Kelvin) এবং মেলভিন কেলভিন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ব্যাক্তি।
কে এই বিজ্ঞানি মেলভিন কেলভিন? উনি নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত আমেরিকার বৈজ্ঞানিক। তাঁর
নামে আমেরিকা ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল আগেই আবার আন্তর্জাতিক রসায়নবর্ষে অর্থাৎ ২০১১ সালে সুন্দর এক ডাকটিকিট প্রকাশ করল।
মেলভিন কেলভিনের জন্ম ১৯১১ সাল আর মৃত্যু ১৯৯৭। গবেষণা
করতেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুর্দান্ত আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানি মেলভিন
কেলভিন। কাজের স্বীকৃতি হিসাবে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হলেন ১৯৬১ সালে। কি
আবিষ্কার করেছিলেন তিনি? দীর্ঘ ও শ্রমসাধ্য গবেষণায়
তিনি সালোকসংশ্লেষ (Photosynthesis)
প্রক্রিয়ার রহস্য ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
গাছের পাতায় তৈরি হয় গাছের খাদ্য, গ্লুকোজ। কেমন করে তৈরি করে গাছ? গ্লুকোজ তৈরি করবার উপাদান জল, বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং সূর্যের আলো। এ সব কাজে
লাগিয়েই তৈরি হয় গ্লুকোজ। রসায়নের জাদু। বিক্রিয়াটি বলা যাক। জল + বাতাসের কার্বন
ডাই অক্সাইড = গ্লুকোজ + অক্সিজেন। বিক্রিয়াটি ঘটায় সূর্যের আলো (6CO2 + 6H2O —> C6H12O6 + 6O2)।
ব্যাপারটা অতি জটিল। রাসায়নিক বিক্রিয়া বুঝতে লেগে গেল একশ
বছর। রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা যাবতীয়
বিজ্ঞানের আবিষ্কার আত্মস্থ করে মেলভিন কেলভিন আবিষ্কার করলেন প্রকৃতির এক গুড়
রহস্য। এই প্রসঙ্গে তাঁর আবিষ্কার বা অবদান কেলভিন সাইকেল (Kelvin Cycle) নামে পরিচিত।
কেলভিন সাইকেল আবিষ্কারের কাজে তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আরও
দুই বিজ্ঞানী (বেনসন এবং ব্যাসম)। দিনের বেলা তাপ শোষণ করে গাছের পাতা আর রাতের
বেলা শুরু হয় গ্লুকোজ তৈরি। অনেক গুলো জটিল বিক্রিয়া ঘটে গাছের পাতার কোষে, ক্লোরোপ্লাস্টের
ভেতর। এই বিক্রিয়ায় অর্থাৎ কেলভিন সাইকেলের মধ্য দিয়ে
গাছের পাতায় তৈরি হয় গ্লুকোজ।
কেলভিনের ডাকটিকিটে এই সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া চিত্রায়িত
হয়েছে।
আরও পড়ুন -
+ পোকাটি কি শুধুই ধ্বংসাত্মক + প্রকৃতির ফাঁদ
+ বিজ্ঞান দিবস ও ভারতের নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী
+ হাড়গিলা কি বিলুপ্ত পাখি
+ মাইক্রোবায়োলজি আর মাইক্রোস্কোপ
+ রহস্যে মোরা গিরগিটি
+ হাঁস নিয়ে অন্য কথা
|