লোককাহিনি - খেঁকশিয়ালের লেজের রং - সিদ্ধার্থ সিংহ । মার্চ - ২০২৪






 খেঁকশিয়ালের লেজের রং








সি দ্ধা র্থ 
সিং হ






....

....

কিশোর বার্তা-র 
এই গল্পটির ছাপা সংখ্যাটি রেজিঃ ডাকে পেতে -

 

খেঁক শিয়ালের পুরো গায়ের রং বাদামি হলেও তার লেজটি কিন্তু সাদা। তার লেজটা কেন সাদাতার পিছনে একটা গল্প আছে

বহু দিন আগে বনের এক পাশে খুনখুনে এক বুড়ি থাকতেন। তাঁর কোনও ছেলেমেয়ে বা আত্মীয়স্বজন ছিল না। থাকার মধ্যে ছিল ছ'টা শুকরছানা আর দশ-দশটা মুরগি। তিনি তাদের খুব যত্বআন্তি করতেন। কিন্তু সময় তো আর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। ধীরে ধীরে সময় যেমন গড়াচ্ছিলতাঁর বয়সও হু হু করে বাড়ছিল। ফলে তিনি আর আগের মতো শুকরছানা আর মুরগিগুলোর দেখাশোনা করতে পারছিলেন না

তাই তিনি একদিন তাঁর পরিচিত একজন লোকের কাছে গেলেন। তার কাছে গিয়ে বুড়ি অনুরোধ করলেনতাঁর পোষা শুকরছানা আর মুরগিগুলোর দেখাশোনা করার জন্য

কিন্তু লোকটার নিজের অনেক কাজ ছিল। তাই সে বুড়িকে বললআমার ইচ্ছে থাকলেও কোনও উপায় নেই। কারণতোমার পোষ্যদের দেখভাল করার মতো অত সময় আমার হাতে নেই

শুনে মন খারাপ হয়ে গেল বুড়ির। তিনি তখন একটা বড় বাদামি রংয়ের ভালুকের কাছে গেলেন

গিয়ে বললেনতুমি কি আমার শৃকরছানা আর মুরগিগুলোকে একটু দেখাশোনা করতে পারবে?

এ দিকে ভালুক তো শুকর আর মুরগি দুটোই খায়। তাই সে মহানন্দে বুড়ির কথায় রাজি হয়ে গেল। বুড়ি তখন বললেনওদের শুধু দেখভাল করলেই হবে না। তুমি ওদের ভালবাসবে তোশুধু ভালবাসলেই হবে নাওদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে তো?

সঙ্গে সঙ্গে সে বললকেন পারব নাআমি ওদের আমার ছেলেমেয়েদের মতোই ভালবাসব ৷ আমি ওদের আদর করে গররর... বলে ডাকব

শুনেই বুড়ি আঁতকে উঠলেন। বললেননা নাতোমাকে দিয়ে হবে না। তোমার এই আদরের ডাকে আমার ছানারা এমনিই মরে যাবে

বুড়ি তখন ভালুকের কাছ থেকে সোজা চলে গেলেন নেকড়ে বাঘের কাছে। নেকড়েও শূকর  আর মুরগি- দুটোই খায়। তাই নেকড়ে বাঘ বুড়ির কথায় সহজেই রাজি হয়ে গেল।

বুড়ি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আমার ছানাদের কী ভাবে ডাকবে?

আমি ওদের... বলেই, আকাশের দিকে মুখ তুলে নেকড়ে বাঘ- ওউ-ওউ-ওই করে ডেকে বলল, আমি ওদের এই ভাবে ডাকব

শুনেই বুড়ি বললেন, ও বাবা, না না, তোমাকে দিয়েও হবে না। অমন ডাক শুনলে আমার ছানারা ভয়েই অক্কা পাবে। এই বলে বুড়ি এ বার গেলেন খেঁকশিয়ালের কাছে

খেঁকশিয়াল ছিল বেজায় বুদ্ধিমান আর তেমনই ধড়িবাজ। বুড়ির কথা শেষ হওয়ার আগেই সে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ছানাদের দেখাশোনা করার জন্য রাজি হয়ে গেল

বুড়ি তখন তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী ভাবে আমার ছানাদের ডাকবে?

বুড়ির মন জয় করার জন্য খেঁকশিয়াল তখন চালাকি করে বলল, আমি তোমার ছানাদের খুব আদর করে বলব, এসো আমার ছোট্ট সোনারা, চাঁদের কণারা, আমার কাছে এসো

খেঁকশিয়ালের ছলনা বুঝতে পারলেন না বুড়ি। তাই তিনি তার কথায় খু-উ-ব খুশি হলেন এবং তাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলেন, তাঁর শূকরছানা আর মুরগিদের দেখভাল করার জন্য

দিন যায়। সপ্তাহ যায়। মাস যায়। বুড়িকে দেখিয়ে দেখিয়ে ছানাগুলোকে খুব আদর যত্ন করে খেঁকশিয়াল। প্রতিদিন সকাল হলেই ঘরের দরজা খুলে ওদের বাইরে ছেড়ে দেয়। ইচ্ছে মতো চরে বেড়ানোর জন্য। সময় মতো খাবার দেয়। জল দেয়। আর অন্ধকার নামলেই শূকরছানা আর মুরগিগুলোকে আলাদা আলাদা ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। যাতে কোনও হিংস্র পশু কিংবা রাক্ষস-খোক্কস ওদের ঘাড় মটকে খেতে না পারে

এই সব দেখে বুড়ি তো বেজায় খুশি। লোকজনের কাছে তার খুব সুখ্যাতিও করতে লাগলেন তিনি। বলতে লাগলেন, খুব ভাগ্য করে এমন একটা খেঁকশিয়াল পেয়েছিলাম বটে!

সব ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎ একদিন বুড়ি তাঁর ছোট্ট কালো শূকরছানাটাকে কোথাও দেখতে পেলেন না। খেঁকশিয়ালকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল, ওই শূকরছানাটা অনেক দূরে চলে গেছে। একেবারে বনের ভিতরে। তবে খুব শিগগিরই ফিরে আসবে সে

কিন্তু শূকরছানাটা আর ফিরে এল না। তার ক'দিন পরেই বুড়ি দেখলেন, তাঁর প্রিয় সেই ধবধবে সাদা মুরগিটাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

খেঁকশিয়ালকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বললমুরগিটা বোধহয় নদীর ও পারে চলে গেছে! তবে চিন্তার কোনও কারণ নেই। সময় হলেই ও ঠিক ফিরে আসবে

সকাল গেল। দুপুর গেল। বিকালও গেল। কিন্তু সেই মুরগিটা আর ফিরে এল না

সন্ধ্যার সময় বুড়ির মন বড় আনচান করতে লাগল। মুরগিটার জন্য। তাই তিনি হামাগুড়ি দিয়ে কোনও রকমে মুরগিগুলোর খোপে গিয়ে ঢুকলেন। মুরগিটা এসেছে কি না দেখার জন্য। সারাদিন তো ও বাড়ি ছিল না! কী খেয়েছে কে জানে! যদি খিদে পেয়ে থাকে! তাই ঢোকার সময় সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন এক বাটি গরম দুধ

গিয়ে দেখেনমুরগিগুলো চিৎকার করতে করতে ঘরের চার দিকে ছোটাছুটি করছে

আর ভীষণ ভয় পেয়ে কক কক ককরকক ককরকক করে তারস্বরে ডাকছে

আর ঠিক তখনই বুড়ির চোখে পড়লএকটা মুরগিকে মুখে নিয়ে ওই খেঁকশিয়ালটা। সুরুৎ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেটা দেখেই বুড়ির চোখ খুলে গেল। বুঝতে আর বাকি রইল না- তাঁর ছোট্ট কালো শুকরছানা আর ধবধবে সাদা মুরগিটা কী ভাবে হারিয়ে গেছে। বুড়ি তখন হাতে থাকা গরম দুধের বাটিটা ছুড়ে মারলেন। গরম দুধের ছ্যাকা খেয়ে খেঁকশিয়াল তো মুরগিটাকে ছেড়ে দিয়ে দে ছুট

ছুটতে ছুটতে বনের ভিতরে গিয়ে সব দুধ সারা পিঠ টুইয়ে তার লেজের মধ্যে ঢুকে গেছে। আর ওই দুধ ঢুকেছে বলেইতার এত দিনের বাদামি রংয়ের লেজটা একেবারে সাদা ধবধবে হয়ে গেছে

সেই যে খেঁকশিয়ালের লেজটা সে দিন সাদা হয়ে গিয়েছিলসেই থেকে আজও বংশের পর বংশ ধরে খেঁকশিয়ালদের গোটা গা বাদামি রঙের হলেওতাদের লেজটা কিন্তু একেবারে সাদা হয়ে আছে। দুধ-সাদা

 (লোককথা অবলম্বনে লেখা)