জানা অজানা । জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


  বড় হওয়ার পথে











সুদীপ্ত শেখর পাল

কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ




 

বড় হওয়ার ইচ্ছা এমন এক ইচ্ছা যা' কোন কিছু প্রাপ্তিতে সম্পূর্ণ শেষ হয় না।  এ বড় হওয়া হরিণের জিরাফে পরিণত হওয়ার মত প্রচেষ্টাতে সীমাবদ্ধ নয়।  

মানুষের দেহ বড় হয় খাদ্য গ্রহণ সহ অন্যান্য শারীরিক কার্যক্রম নিস্পন্নতার ফলে  ও অবশ্যই উপযুক্ত সময়ের ব্যবধানে। কিন্তু শরীর ছাড়া মানুষের যে আলাদা অস্তিত্ব বিদ্যমান তার বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের প্রয়োজন গৌন।

কারণ মানুষের আলাদা অস্তিত্বের কথা বলছি তার মূল উপাদান প্রোটোপ্লাজম নয়মূল উপাদান মন। শুধু চোখ নয় অন্য কোন  ইন্দ্রিয়ের দ্বারাই  মনকে উপলব্ধি করা যায় না।  অথচ মনের সঙ্গে যুক্ত থাকে আমাদের বৃত্তি ও সংস্কার। তাই এদের উপরে ভর করেই থাকে আমাদের চেতনা। তাই লেখাপড়াশিল্প সংস্কৃতি কিংবা লৌকিক ব্যবহার  যাতেই আমরা বড় হতে চাই না কেন আমাদের চেতনা বা দেহাতিরিক্ত চেতন সত্তার উপর নির্ভর করতে হয়।  

জ্যমিতি শিখতে গেলে প্রথমেই কিছু সিদ্ধান্ত স্বীকার করতে হয়। সেগুলোই পরবর্তী কালে অন্য সিদ্ধান্তে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে। তেমনি বড় হতে গেলে প্রথমেই স্বীকার করতে হয় যেআমি বড় নইআমার চেয়ে কেউ না কেউ বড় আছে।  সবাই সমান হলে বড় হওয়ার আকাঙ্খাই জন্মাতো না।  এইবার সন্ধান করতে হবে সেই বড় মানুষকে। অন্য ভাবে বলতে পারি আমার ক্ষুদ্র চেতনার সঙ্গে যুক্ত কর‍তে হবে বৃহৎ চেতনাকে। এই বৃহৎ চেতনাকে আমরা খণ্ড খণ্ড করে পাই বিদ্যালয়ের শিক্ষক  মহাশয়দের মধ্যে।  তাঁরা বইয়ের মধ্যে থাকা বিষয় গুলিকে আমাদের চেতন উপযোগী করে তুলে ধরেন। সংশয় নিরসন করেন।  বিষয়ের গভীরে যাওয়ার পথ তৈরি করে দেন। সেই পথে অগ্রসর হতে হতে চেতনার প্রসার ঘটে ও মানুষ বড় হয়। তখন পূর্বে লাভ করা জ্ঞানকে নতুন করে ভাবা সম্ভব হয়। পরে কখনো তথ্যের সংযোজন ঘটেকখনো বা কোন তথ্য পরিত্যক্ত হয়। পূর্বে অর্জিত কোন জ্ঞানের অসারতা প্রমাণ হলেও সেই পথের অবলুপ্তি ঘটে না। কেননা নতুন পথের সন্ধান পেতে হয়েছে পুরানো পথে যাত্রা করে। তাই জ্ঞানার্জনের প্রথম শর্ত অস্বীকার নয় স্বীকার, ঔদ্ধত্য নয় আনুগত্যখেয়াল খুশি চলা নয় নিয়ম মাফিক চলা।  

এরপর আসে জ্ঞানের প্রয়োগের প্রসঙ্গ। আমাদের কবি আশা করেছেন,  "আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে / কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।" এই ইচ্ছা একলা কবির ইচ্ছা নয়সমগ্র জাতির ইচ্ছা। যখন কেউ কাজে বড় হয়তখন সে নিজের চেয়ে নিজে বড় হয়।  অন্যকে ছোট করে বড় হওয়ার দরকার পড়ে না। কোন শিল্পী একাগ্র চিত্তে দীর্ঘদিন আঁকার পরে যখন নতুন কোন ভাবকে প্রকাশ করতে সমর্থ হয় তখন সে অপার আনন্দ উপভোগ করে। শিল্প রসিক তাকে বড় শিল্পীর মর্যাদা প্রদান করে। এখানে যে  প্রতিযোগিতায় শিল্পী বড় হল সে প্রতিযোগিতা তার নিজের সঙ্গে। এই বড় হওয়ার জন্য  কাউকে ছোট  হতে হয়নি। শিল্পী তার নিষ্ঠা ও কৃতিসম্বেগের ফলে নিজের অজ্ঞাতসারেই নিজেকে অতিক্রম করে গেছে।  কখন গেছে সে জানে না।  এই জন্যই সে নিজেকে বড় বলে ভাবতে পারে না। এখানেই সেই কবির বাণী সার্থক --- 

                     " আপনারে বড় বলে বড় সেই নয়
                    লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়। " 

বড় মানুষের নিষ্ঠা বলি আর বড় হওয়ার প্রেরণাই বলি সমস্ত কিছুর মধ্যে সাধারণ জিনিস হল ভালোবাসা।  কোথাও না কোথাও নিবদ্ধ থাকে ভালবাসার টান। এই টান যোগায় অফুরন্ত কর্মশক্তি। তখন সে জগতকে প্রেমের দৃষ্টিতে দেখতে অভ্যস্ত হয়। কেউ পিছিয়ে পড়ে থাকলে বেদনা অনুভব করে। পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে দিতে না পারলে তার শান্তির ব্যাঘাত ঘটে।  নিজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অন্যকে উন্নত করার চেষ্টাও করে। সবচেয়ে মজার কথা হলএই করতে করতেও সে অনেকখানি বড় হয়ে যায়। যেমন সহপাঠীকে কোন বিষয়ে যে বোঝাতে যায়তার বোধের খাঁকতি থাকলে ধরা পড়ে। অজ্ঞাতসারে তার  বুঝ  পাকা হয়

 


 

আরও পড়ুন  -

+    পঞ্জিকার অন্দরে


+    বন্ধু বিবেকানন্দ

+    দর্শন

+    শূন্যের আবিস্কার ও গুরুত্ব

+    ধীরে ধীরে জ্ঞানের গভীরে

+    ছবি আঁকার পথে মানুষের বিচরণ

+    বেচারা তিমি

+    সঙ্গীতের সঙ্গী হতে


+    নানা রকম দেখা

+    মাধ্যাকর্ষণের পথ ধরে

+    ইংরাজি ভাষা ও তার অক্ষর পরিচয়




সূ চি প ত্র