ফুরিয়ে আসছে
পৃথিবীর অক্সিজেন ।
পুলকরঞ্জন চক্রবর্তী পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ
| | পৃথিবীর অক্সিজেন ভান্ডার ক্রমেই কমে আসছে, আগামীদিনে শ্বাস নেওয়ার মতো অক্সিজেনও পৃথিবীতে থাকবে না। বায়ুমণ্ডল অক্সিজেন শূন্য হলে দেখা দেবে প্রাণের অস্তিত্বের এক ভয়াবহ সংকট। মানবসভ্যতার জন্য এমনই ভয়ংকর এক সতর্ক বার্তা দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনেটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা নাসা।
নাসার নেক্সাস ফর
এক্সোপ্ল্যানেট সিস্টেম সায়েন্স এবং জাপানের তোহো ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা সম্প্রতি
জানিয়েছেন, দ্রুত ফুরিয়ে আসছে পৃথিবীর অক্সিজেন, কমে আসছে সঞ্চিত অক্সিজেনের ভান্ডার। আজ থেকে ১০০ কোটি বছর
পরে, সম্পূর্ণ অক্সিজেনহীন হয়ে পড়তে পারে
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল,
ভেঙে পড়বে ওজোনস্তর। অক্সিজেনহীন সেই পৃথিবীতে মানুষ তো দূরের কথা, কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদই আর টিকে থাকতে পারবে না। টিকে থাকবে শুধু কিছু অণুজীব
যারা অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকে। ওজোনস্তর ভেঙে যাওয়ার কারনে সূর্য থেকে অতিবেগুনি রশ্মিও সরাসরি পৃথিবীতে এসে পড়বে ফলে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ হওয়ার অনুকূল
পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। তোহো ইউনিভার্সিটির কাজুমি
ওজাকি এবং জর্জিয়া টেকের ক্রিস্টোফার রেইনহার্ডের যৌথ গবেষণায় দাবী করা হয়েছে, প্রায় ৪৫৭ কোটি বছর আগে
তৈরি হওয়া আমাদের সৌরপরিবারের প্রধান সূর্য নিউক্লিয়ার ফিউশনের কারনে এখন এতটাই
উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা কার্বন ডাইঅক্সাইড অণুগুলোকে ভাঙতে শুরু
করেছে। সূর্য ইতিমধ্যেই
তার জীবনচক্রের প্রায় অর্ধেক পথ অতিক্রম করেছে। এই সময়ে
তার কেন্দ্রটি ক্রমেই
উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আমাদের পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে সূর্যের অবস্থান ও উত্তপ্ত হয়ে ওঠা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে সূর্যের এই উত্তপ্ত হয়ে ওঠা আরও
বাড়বে। নাসা বলেছে, আমাদের সৌরজগতের মধ্যমণি সূর্য প্রায় ২০ বছর ধরে শান্ত ও
দুর্বল অবস্থায় ছিল। ২০০৮ সালে সূর্যের প্রকৃতিতে আশ্চর্যজনকভাবে একটি পরিবর্তন
আসে। বিজ্ঞানীরা সেই পরিবর্তনের কারণে খুঁজে বের করার
চেষ্টা করছেন। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে সূর্যের
সৌরবায়ু বা চার্জ হওয়া কণার স্রোতের গতি, ঘনত্ব, চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি ও তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সূর্যের এই তাপমাত্রার বৃদ্ধি বছরে প্রায় ছয় শতাংশে কাছাকাছি। এই বৃদ্ধি এই মূহূর্তে খুব বেশি মনে না হলেও আগামী দিনে এর প্রভাব অনেকটাই বেশি হবে এবং
কার্বন ডাই অক্সাইড অণু ভাঙতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করবে। কার্বন ডাইঅক্সাইড
অণুগুলো ভেঙে গেলে সবুজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া থমকে যাবে কারন সালোকসংশ্লষের অন্যতম উপাদান এই কার্বন
ডাইঅক্সাইড। সালোকসংশ্লষ না হলে অক্সিজেন তৈরি হবে না। অক্সিজেন তৈরি না
হলে পৃথিবীর প্রাণীকুলের হারিয়ে যাওয়া হবে স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, অক্সিজেন কমে যাওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বাড়তে
শুরু করবে মিথেন গ্যাসের
পরিমাণ, যেটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত করে তুলবে। ঘটনাটি মানব
সভ্যতার জন্য একটি বড় হুমকি। শুধু মানুষ নয়, অক্সিজেন হীন পৃথিবীতে
বেঁচে থাকবে না কোনো প্রাণী বা গাছপালা। পৃথিবী পৃষ্ঠের সব জল শুকিয়ে যাবে। পৃথিবী পরিণত
হবে এক ধূসর মরুভূমিতে। বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন, বিষয়টি এমন নয় যে এই ঘটনা বিস্ফোরনের মতো ঠিক ১০০ কোটি বছর
পরেই ঘটবে, এটি
একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং কিছুদিন পর থেকেই ঘটতে পারে।
নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির প্রধান গবেষণা লেখক জেমি জ্যাসিনস্কি বলেন, সূর্য ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। জেগে ওঠার সাথে সাথে বাড়ছে সূর্যের উত্তাপ।
এই ঘটনায় ধীরে ধীরে বহু
প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে ও একদিন আমাদের পৃথিবী পরিণত
হবে শুষ্ক ও মৃত এক গ্রহে। পৃথিবী ইতিমধ্যেই প্রাণীদের বাসযোগ্য
সময়ের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সময় ব্যয় করে ফেলেছে। অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ না
হলে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে সমগ্র প্রাণী জগৎ। একমাত্র সবুজ বনাঞ্চলই এই
ঘাটতি পূরণে সক্ষম। বনসৃজন ও বনাঞ্চলের বিস্তার সঙ্গে ক্লোরো - ফ্লুরো- কার্বন ও
হ্যালোনের থেকে ওজোনের স্তর রক্ষা খুবই এখন জরুরি হয়ে
উঠেছে। বিজ্ঞানীরাও খোঁজ করছেন মুক্তির পথ।
.......................................................................................
আ র ও প ড়ু ন -
+ কপি পেস্টের জনক ল্যারি টেসলার
+ ডাইনোসরের বিরল জীবাশ্মের খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা। |