জ্ঞান বিজ্ঞান । ভাদ্র ১৪৩২



গলগি 












ড. সৌমিত্র চৌধুরী

কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ




 

আশ্চর্য শব্দ। আসলে অ্যাপোনিম। ব্যক্তির নামেই নামকরণ। যেমন ভিক্টোরিয়া পার্ক, রানী ভিক্টোরিয়ার নামে। 

বিজ্ঞানের পরিভাষায় বহু অ্যাপোনিম স্থান পেয়েছে। ভোল্ট, গ্যালভানাইজ, নিকোটিন, ডেসিবেল, অ্যালগরিদম। এ ছাড়াও কত রকম সূত্র চিহ্নিত হয়েছে বিজ্ঞানীর নামে। তেমনি অ্যাপোনিম, ‘গলগিশব্দটি।   

গলগি, গলগি অ্যাপারেটাস কিংবা গলগি কমপ্লেক্স। যে নামেই চিহ্নিত হোক, আদতে এটি যন্ত্র বিশেষ, অর্থাৎ অ্যাপারেটাস। উদ্ভট নাম! কেমন এই যন্ত্র, কী কাজ করে, কোথায় থাকে?  

থাকে কোষের মধ্যে। কোষ বা সেল (Cell) জীবিত বস্তুর সংক্ষিপ্ততম রূপ। ল্যাটিন ভাষার সেলুলার (ছোট ঘর) থেকে সেল (কোষ) শব্দের উৎপত্তি। খুবই ক্ষুদ্র আর সুক্ষ গঠন কোষের। বাইরে মেমব্রেন বা পর্দা আর ভিতরে সাইটোপ্লাজম। অনেক যন্ত্রপাতি, প্রোটিন, লিপিড, নিউক্লিক অ্যাসিডের অবস্থান পর্দার ভিতর, সাইটোপ্লাজমে। 

কোষের পরিচয় সহজে জানা সম্ভব হয়নি। তিনশ বছরের নিরলস গবেষণা ধীরে ধীরে উদ্ঘাটন করেছিল বহু রকম তথ্য।কোষবিষয়টির সম্পূর্ণ তথ্য উদ্ধার হয়েছে, এখনও বলা যাবে না।  

     খালি চোখে দেখা যায় না। বেশীরভাগ উদ্ভিদকোষ বা প্রাণীকোষ (1-100 nm) নজরে আসে অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা লাইট মাইক্রোস্কোপের (Light microscope) সাহায্যে নিয়ে। লাইট মাইক্রোস্কোপ যন্ত্রে আলোক রশ্মি (visible light) ব্যবহার করা হয়। আলোকরশ্মি ব্যবহার হয়না এমন মাইক্রোস্কোপও আছে। যেমন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ। আলোকরশ্মির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ইলেকট্রন রশ্মি বা ইলেকট্রন বিম। 

সুক্ষ বস্তুকে জানতে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের খুবই বড় ভূমিকা। কোষের গঠন সম্পর্কে বহু তথ্য জানান দিয়েছে। কোষের ভিতর ক্রিয়াশীল যন্ত্রপাতির খবরও জানিয়েছে। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রমাণ করছে কোষের মধ্যে আছে অতি সুক্ষ এক যন্ত্র, তার নাম গল্‌গি অ্যাপারেটাস। কী কাজ এরলিপিড এবং প্রোটিনকে কোষের উপযোগী করে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয় গলগি কমপ্লেক্স। গল্‌গির মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ হয় প্রোটিন লিপিড ইত্যাদি অণু গুলোর। এমন না হলে অর্থাৎ গলগি কাজ করতে না পারলে সৃষ্টি হয় অনেক অসুখ

গলগির অস্তিত্ব এবং কর্মকাণ্ড সহজে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ক্যামিলো গলগি (Camillo Golgi, 1843-1926) নামে ইতালির এক বিজ্ঞানী নার্ভ কোষ সম্পর্কে গবেষণা করছিলেন। তিনি লক্ষ করলেন কোষের ভিতর সুক্ষ পর্দা দিয়ে ঘেরা রয়েছে অতি ক্ষুদ্র এক যন্ত্র। যন্ত্রের নাম দিলেন ইন্টারন্যাল রেটিকুলার অ্যাপারেটাস (1898) 



এর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ সঠিক ভাবে ইন্টারন্যাল রেটিকুলার অ্যাপারেটাস-এর অস্তিত্ব প্রমাণ করেছিল। কালক্রমে বিজ্ঞান পরিভাষায় গল্‌গি কমপ্লেক্স হিসাবে স্থান লাভ করল (1956) এই যন্ত্র। আবিষ্কারকের নামেই (aponymous) যন্ত্রের নাম। 

প্রোটিন লিপিড অণু গুলোর পরিবর্তন সাধন করে নির্দিষ্ট জায়গায় চালান করে গল্‌গি। এই কাজ ব্যাহত হলে তৈরি হয় বহু রোগ। স্নায়ুর অসুখ, ক্যানসার, হার্টের রোগ।



আরও পড়ুন  -

 

বোতল ব্রাশ


ফুলের কেন এত রঙ

ডাকটিকিটে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ...

প্রকৃতির ফাঁদ

বিজ্ঞান দিবস ও ভারতের নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী

হাড়গিলা কি বিলুপ্ত পাখি

মাইক্রোবায়োলজি আর মাইক্রোস্কোপ

রহস্যে মোরা গিরগিটি

হাঁস নিয়ে অন্য কথা